সেও বিশ্বাস করলো না,কাল্পনিক ছায়া কেড়ে নিল জুলেখার জীবন
- Update Time : ০৫:৫৪:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৬৩ Time View

সন্ধার পর বাড়ির বাহিরে কাল্পনিক মানুষের ছায়া দেখতে পায় শাশুরি। সেই ছায়াকে কেন্দ্র করে পুত্রবধু জুলেখাকে দেওয়া হয় পরকিয়ার অপবাদ। হতভাগী জুলেখা বার বার নিজেকে নিষ্পাপ দাবী করেছেন, সেই সাথে এমন জঘন্য অপবাদ না দেওয়ার জন্য শাশুরির পা ধরে কেঁদেছেন অথচ শাশুরির কাল্পনিক পাষান মন গলেনি। নিজেকে নিষ্পাপ প্রমান করতে শাশুরিকে বার বার বলেছেন আমাকে মেডিকেলে নিয়ে চলেন, রিপোর্ট বলে দিবে আজ পর্যন্ত কোন পরুষ আমাকে স্পর্ষ করেছে কি না? শাশুরি রাজি হননি। একটা কাল্পনিক ছায়াকে পূত্রবধুর পরকিয়ার রুপ দিয়ে প্রবাসে থাকা ছেলের কানে বিষ ঢালা হয়। শুরু হয় নিষ্পাপ জুলেখার উপর মানুষিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে জুলেখাকে রেখে আসা হয় বাবা বাড়িতে। একটা কাল্পনিক ছায়া জুলেখার জীবনে হয়ে উঠে মরোনাস্ত্র। যার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে, কঠিন যন্ত্রনায় আত্মঘাতীর পথ বেঁছে নেন হতভাগী জুলেখা। অর্থাৎ শাশুরির তৈরি ছায়া নামক অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয় জুলেখাকে।
ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪নং থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর (আফুছাগাড়ি) গ্রামে। জুলেখা আত্মহত্যার ১০/১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো এলাকা জুরে চলছে শোকের মাতল।
প্রতিবেশীদের বক্তব্য, নিষ্পাপ জুলেখার আত্মহত্যার পিছনে দায়ী তার শাশুরি ও স্বামী। তারা একটা কাল্পনিক ছায়াকে অস্ত্র বানিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে জুলেখাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে। ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে জুলেখা আত্মহত্যার কারন উদঘাটনের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তথ্যমতে, দেড় বছর পূর্বে উপজেলার জামালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে (মালেয়শিয়া) প্রবাসী মো, খাদেমূল ইসলাম ওরফে খাদেমের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে গোপালপুর ‘আফুাছাগাড়ি’ গ্রামের মেয়ে জুলেখার। প্রবাসে থাকা অবস্থায় দুই পরিবারের সম্মতিতে মোবাইল ফোনে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শশুর বাড়িতেই থাকতেন জুলেখা। বিয়ের পর কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। এখনো স্বামীর আদর সোহাগ কপালে জোটেনি। এমতাবস্থায়, গত ১৩/৮/২০২৫ ইং তারিখে বাবার বাড়িতে কিটনাশক বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন জুলেখা।
আত্মহত্যার আগে জুলেখার উল্লেখ যোগ্য ৩টি ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল-১/শেষ আসা ছিল সে, কিন্তু সেও বিশ্বাস করলো না। ২/এমন মৃত্যু নিজেকে দিতে চাই যেনো-আমার লাশটাও কেউ শেষ বারের জন্য দেখতে না পায়। ৩/ আমি মারা গেলে তোমরা আমার মা বাবার চোখের পানি মুছে দিও, সান্তনা দিও, কারন আমার জীবিত অবস্থায় এই দুইজন ছাড়া আমায় কেউ ভালোবাসেনি।
জুলেখার মা বলেন, তার শাশুরি জুলেখাকে রেখে গেলেও ঘটনার বিষয়ে কিছু জানায়নি এমনকি জুলেখাও কিছু বলেনি। শুধু দেখতাম মা আমার কারো সাথে তেমন কথা বলতোনা। এখানে সেখানে চুপচাপ বসে থাকতো। গোপনে প্রচুর কান্নাকাটি করতো। তার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারতাম, তবে মা আমার শিকার করতো না। স্বামীর সাথে মোবাইলে যখনি কথা বলতো, দেখতাম মা আমার ঝুপঝুপ করে কাঁদতো। মা আমার মারা যাওয়ার চারদিন আগে তার শাশুরির মাধ্যমে পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদের বিষয়ে জানতে পারি। মাকে অনেক শান্তনাও দিয়েছি। তবে যেদিন মা’র নাম্বার তার স্বামী ব্লক করে দিল, মা আমার পাগল হয়ে গিয়েছিল। শেষ বাবের মত একটি বার স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য মা আমার গড়াগড়ি খেয়ে কেঁদেছে। পরের দিন মা আমার বিষ খেয়ে মরে গেল। শাশুরির দেখা সেই কাল্পনিক ছায়া বাঁচতে দিলোনা আমার ‘মা’ জুলেখাকে।
বিষয়টি নিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম বলেন, জুলেখা আত্মহত্যার খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয় এবং লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত শাশুরির কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা শিকার করেন এবং নিজের ভুলও শিকার করেন। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যার পর্যায়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি।
উল্লেখ্য, জুলেখা আত্মহত্যার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন এবং প্রমান সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন, স্থানীয় জন-প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।




















